Breaking News

BCS Cadre Choice......


BCS Cadre Choice: এডমিন কেন অথবা কেন নয়?

BCS Cadre Choice:

সাইফুল ইসলাম রিমেল 
বিসিএস(প্রশাসন)
২৮ তম বিসিএস

ক্যাডার পছন্দঃ এডমিন কেন অথবা কেন নয়?


অনেকেই বিসিএসে এডমিন প্রথম পছন্দ দিবে হয়তো। অনেকেই জেনে বুঝে, অনেকেই হুজুগে। কেউ কেন এডমিন পছন্দ করবে অথবা করবে না তার উপর একটা লেখা লিখতে প্রচুর অনুরোধ পেয়েছি। এই সার্ভিসের একজন সদস্য হিসেবে চাকুরীতে প্রায় ৪ বছর হতে চলল। তাই ভাবলাম একটু যথাসম্ভব নির্মোহ দৃষ্টিকোন থেকে এই সার্ভিসের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে একটু লিখি!
ক্যাডার চয়েস অনেকাংশে পারসোনালিটি নির্ভর। চলাফেরা, রুচিবোধ, চিন্তার গণ্ডি, ভাবনার রকমফের ক্যাডার পছন্দের ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। চলুন দেখা যাক আপনার রুচির সাথে এডমিন কতটুকু ম্যাচ করে!
কেন প্রশাসন আপনার প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত?
=============================
১। এক প্রশাসন সার্ভিস আপনাকে সারাজীবনে মিনিমাম ১৫ টি চাকুরী করার অভিজ্ঞতা দেবে। বৈচিত্র্য এই ক্যাডার এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। আপনার একটা পোস্টিং থেকে অন্য পোস্টিং হবে আলাদা। অন্য সকল ক্যাডার নিজের কাজটা নিয়েই থাকবে সারাজীবন। কেবল এডমিন কে সকল কাজেই আপনি পাবেন। ম্যাজিস্ট্রেট, এ সি ল্যান্ড, ইউ এন ও, ডি সি, সহকারী সচিব থেকে সিনিয়র সচিব হিসেবে মন্ত্রনালয়ে, সরকারের সকল অধিদপ্তর, পরিদপ্তরে, সরকারের সকল প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে, সব কর্পোরেশন গুলোর প্রধান হিসেবে ( পাটকল, চিনিকল, মিল্ক ভিটা ইত্যাদি) আপনি পোস্টিং পাবেন। সকল ফরেন কন্সুলার অফিস এ, এফ ডি সি তে সহ সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের উপরের পদ গুলোতে আপনার পদচারনা থাকবে। আমি নিজেই অনেক পরে এসে জেনেছি যে বেসামরিক বিমান পরিবহনের ৪ টি মেম্বার পদ এডমিন থেকে যায়। সিটি কর্পোরেশন, জেলাপরিষদ এডমিন ক্যাডার চালায়। অতি আশ্চর্যের বিষয় এই যে প্রতিটা ক্যান্টনমেন্ট এ ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ নামের একটা পোস্ট আছে এডমিনের যে ক্যান্টনমেন্ট এর ভিতরের স্কুল, কলেজ, ইনফ্রাস্ত্রাকচার এসবের অভিভাবক।
বলা হয় চাদে যদি বাংলাদেশ সরকার কোন শাখা খুলে তবে প্রথমে একটা এডমিন পোস্ট সৃষ্টি করে পরে অন্য ভাবনা!

২। এই ক্যাডার এর অফিসার গন ইদানিংকালে গণ হারে ফরেন ডিগ্রি নিচ্ছেন। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া সহ ইউরোপের দেশগুলোতে সিনিয়র সহকারী সচিব লেভেলের প্রায় সবারই কোন না কোন ইউনিভার্সিটির মাস্টার্স ডিগ্রি আছে।

৩। এই ক্যাডার এর প্রধান কাজ হল অন্য সকল ক্যাডার অফিসার দের মাঝে সমন্বয় সাধন। জেলায় ডি সি রা সকল বিভাগের মাঝে সেতুবন্ধের কাজ করেন। ভাল ব্যাবহার যদি করেন, একটু যদি হেসে কথা বলেন তবে আপনি মনোযোগের কেন্দ্রে থাকবেন এ কথা নিশ্চিত বলা যায়। আর সবচেয়ে বড় কথা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলায়, জেলায় ও বিভাগে আপনার অবস্থান আপনাকে একটু গর্ববোধ করার অধিকার দিতেই পারে। ইউ এন ও ও ডি সি গন সরাসরি মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকে ফলে সরকারের পলিসি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও পলিসি ফিডব্যাক এডমিন অফিশিয়ালরাই দেন।

৪। সরকারের সচিবালয় যন্ত্র মূলত এডমিন ক্যাডার দিয়ে পরিচালিত। আর সচিবালয় জিনিসটা কি আশা করি সবাই বুঝেন। সরকারের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাগণ ৭৫ ভাগ কেবল এডমিন থেকে নিযুক্ত হইবেন এবং বাকি ২৫ ভাগ অন্য সকল ক্যাডার এর সিনিয়র অফিসার গনের জন্য উন্মুক্ত থাকিবে। রাজনৈতিক দিক থেকে দেশকে পরিচালিত করেন মন্ত্রী মহোদয়গণ। দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করেন তাঁরা। আর এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে নিবিড় ভুমিকা দাপ্তরিক প্রধান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সচিব ও সিনিয়র সচিবের। কেউ যদি নিজেকে দেশের পলিসি তৈরিতে যুক্ত দেখতে চান, স্বপ্ন দেখেন রুপান্তরের তিনি প্রশাসনের অংশ হওয়ার আগ্রহ দেখাতে পারেন।

৫। দিন যাবে আপনার কাজের পরিধি বাড়বে। চাকুরীতে থাকাকালে আপনি গুরুত্ব পাবেন, পাবেন অবসরের পরও। সরকারের সাংবিধানিক সংস্থাগুলো তে বুড়ো বয়সে আপনার প্রাধিকার থাকবে।বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন, নির্বাচন কমিশনের প্রধানগন এডমিনের প্রাক্তন সচিব ছিলেন। পত্রিকায় কলাম লিখবেন, দেশের ভূত ভবিষ্যৎ নিয়ে মত দিবেন, সরকারকে পরামর্শ দিবেন আপনি। কারন সারাজীবন ব্যাপিয়া আপনি তো এই কাজেই নিয়োজিত ছিলেন।

৬। রাজনীতি না করেও কেউ যদি রাজনীতিবিদদের মত গণ মানুষের কাছে যেতে চান তাঁকে এডমিন চয়েস দিতেই হবে। একমাত্র ক্যাডার এডমিন যার বিচরন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী হতে সমাজের সকল বর্ণের, গোত্রের মানুষের কাছে। ধনী দরিদ্র, ভাল খারাপ, সকল চাকুরীজীবী, ব্যাবসায়ি, সুশীল সমাজ সবার মাঝে মিশে থাকার এক দুর্লভ সুযোগ। জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ আপনার বিচরনের মাঠ। ঠিক এ কারনেই অনেক ইউ এন ও ও ডি সি র বিদায়ে মানুষকে কাঁদতে দেখেছি আমি।

৭। সম্মানের জায়গাটা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। এখনও অনেক কিছুর পরেও উপজেলায় ইউ এন ও সবচেয়ে বেশি ফোকাস এ থাকেন, জেলায় ডি সি। আমার ৪ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি জেলায় কোন বড় আয়োজন সম্পূর্ণ হয় না ডি সি র উপস্থিতি ছাড়া। ধর্মীয়, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, ব্যাক্তিক যেকোনো অনুষ্ঠানে ডি সি ও ইউ এন ও র উপস্থিতি সকলের আগে কাম্য। এ সার্ভিস এর কিংবদন্তি তুল্য গ্ল্যামর এ একটু টান পড়েছে সত্য কিন্তু তবুও আমি নিজে তো এখনও বিকল্প দেখি না!

৮। প্রমোশন সম্ভাবনা এখন অনেক বেড়েছে আমাদের। ৬ বছরে ইউ এন ও হয়ে যাওয়াটা খারাপ না কিন্তু। কিছু বড় ব্যাচ অবসরে গেলে ১০ বছরে ডেপুটি সেক্রেটারি হওয়ার সম্ভাবনা আমরা দেখি। সরকারি ও স্বায়ত্ত শাসিত প্রতিষ্ঠানের সকলের আপনার স্ট্যাটাস পেতে চাইবে দেখেও ভাল লাগবে নিশ্চিত। যেমন অমুক এই পদে আছে যা কিনা উপসচিব পদমর্যাদার পদ!!

৯। জুডিশিয়ারি নাই বলে অনেকে হাহাকার করেন। কিন্তু মোবাইল কোর্ট এর অধীনে তাৎক্ষনিক ২ বছর পর্যন্ত সাজা দিয়ে প্রায় সব সামাজিক অপরাধের বিচারের ভার এই দেশ আপনার কাঁধে দিয়েছে। দেশের মানুষকে মোবাইল কোর্ট খাবারের বিষয়ে সচেতন করে শাস্তি দিয়ে বিপ্লব সাধন করেছে। এক মুনির চৌধুরী ও রোকন উদ দোলার কল্যাণে মানুষ এক্সপায়ার ডেট দেখে খাদ্য সামগ্রী কিনতে শিখেছে, ইভটিজিং রোধ, নদী খাল ভরাট রোধ, বাল্যবিবাহ ঠেকানো, ফরমালিন এর অভিশাপ ও মাদক মুক্ত দেশ গড়ার অভিযানে এই মোবাইল কোর্ট এখন এক মুক্ষম অস্ত্র।

১০। সরকারের যেকোনো অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়ন কে করবে? জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজ কার হাতে সপে দেয়া হবে? প্রশাসনের হাতে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ওয়েব পোর্টাল কে তৈরি করেছে ? ডি সি অফিস। সারা দেশে ৫০০০ ইউনিয়ন ডিজিটাল সার্ভিস সেন্টার কাদের সক্ষমতায় তৈরি হয়েছে? সহকারী কমিশনার, এ ডি সি, ডি সি, ইউ এন ও র হাত ধরে। সকল সরকারি অফিস ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় আনার কাজ কে করছে ? ডি সি অফিস। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে মাঠ প্রশাসনে কারা নিরন্তর কাজ করে চলেছে? এ টু আই প্রকল্প কারা গড়েছে? এই বিশাল কর্মযজ্ঞের অংশীদার হতে চাইলে এডমিন এ আসুন!

এডমিন কেন নয়???
===========
১। কাজের প্রেসার ও প্রটোকল কখনও আপনাকে পাগল বানিয়ে দেবে এই সার্ভিস এ। আর্মির বাইরে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ফর্মালিটি এডমিন সার্ভিস মেনে চলে। জুনিয়র লেভেলে প্রায় দম বন্ধ হয়ে আসতে পারে। আমার নিজের ও হত এক সময়। ছুটি ও অবসর ভুলে গেলেই ভাল। সরকারি ছুটি ও শুক্র শনি বার আপনার ইচ্ছা মত ছুটি অবশ্যই পাবেন না। ডি সি স্যার এর মর্জির উপর আপনাকে ভরসা করতে হবে। ইউ এন ও/ ডি সি হলে অথবা অন্য অনেক পোস্ট এ থাকা কালে ঈদ ও আপনার জব ষ্টেশন এ করতে হতে পারে।
২। আপনার পালিত দায়িত্বের তুলনায় প্রশংসা আপনি কখনই পাবেন না। বরঞ্চ পান থেকে চুন খসলে ঝাড়ি নিশ্চিত। এডমিন অফিসারদের ভুল করার বিলাসিতা দেখানো যায় না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই গুরুগম্ভীর পরিবেশ থাকবে আপনার আশপাশে।
৩। যেখানেই থাকুন না কেন আপনি সবসময় ফোকাস এ থাকবেন বলে সমালোচনা সবচেয়ে বেশি আপনার। আপনি ৫ টাকা ঘুষ খাবেন তো জাতীয় পত্রিকার নিউজ। আপনার ব্যাচেরই কোন কোন ক্যাডার এর অফিসার মাসে অকল্পনীয় ঘুষ খাবেন কিন্তু কোন নিউজ হবে না, শব্দ ও হবে না। একজন জেলা প্রশাসক ও যদি ২ বছর নিয়ম মাফিক ঘুষ খান তবু অনেক ক্যাডার এর জুনিয়র লেভেলের অফিসার এর এক বছরের ঘুষের সমপরিমান হবে না। কিন্তু আপনি যদি ঘুষ নাও খান তবু পরিস্থিতির কারনে খবরের শিরোনাম হয়ে যাবেন! এবং এডমিন সার্ভিস এ জব করার কারনে আপনি অত্যন্ত ভদ্রলোক হওয়ার পর ও বন্ধু পাবেন না তেমন! কারন আপনি হবেন অন্য অনেকের কাবাবে হাড্ডির মত অনাহুত।
৪। রাজনৈতিক রেষারেষির সবচেয়ে বড় বলি হয় এডমিন ক্যাডার অফিসাররা। ও এস ডি, বাজে পোস্টিং, বদলি, মানসিক প্রেসার এসব সহজভাবে নেয়া শিখতে হবে। এবং রাজনিতিবিদগন বেশীর ভাগ সময়েই আপনার ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকারে বের হবেন। নেতা ও পাতি নেতা সামলানো এই সময়ে এডমিন সার্ভিসের সামনে নতুন এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

এখন এসব কিছু নিয়ে ভাবুন। বিবেচনায় নিন। যদি নেতৃত্ব দিতে চান, চ্যালেঞ্জ নিতে চান, সাহস থাকে, রিস্ক নেয়ার, কষ্ট করার ও দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন তবেই এডমিনে আসুন।

Admin Service can sometimes be very painful, stressful, challenging , frustrating but i can bet, it can never be boring.
And We the admin officers are here to lead the country from the front , towards greater development equipped with greater insights, modern outlook and knowledge base.
Advance Welcome to Bangladesh Administrative Service (BAS) !!!


বিসিএস পরীক্ষায় ক্যাডার চয়েসঃ সুজন দেবনাথের জানালায়

সুজন দেবনাথ
২৮ তম বিসিএস
বিসিএস(পররাষ্ট্র)
সহকারী সচিব,বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়।

BCS Cadre Choice-বিসিএস পরীক্ষায় ক্যাডার চয়েসঃ সুজন দেবনাথের জানালায় 


অনেকগুলো মেসেজ এসেছে - ক্যাডারগুলোর সুবিধা-অসুবিধা বলে একটা তুলনামূলক লিখা দিতে। এই কাজটা আমার একেবারেই অপছন্দের। অনেককে এ নিয়ে মুখে বলেছি, কিন্তু কখনও লিখি নি। অনেকের মেসেজের জবাবে এই লেখাটি চাকরি সংক্রান্ত গ্রুপগুলোতে দিয়েছিলাম। তবুও এই একই বিষয়ে নিরন্তর মেসেজ আসতেছে। তাই অবশেষে অনিচ্ছা সত্ত্বেও এখানে দিলাম। ইনবক্সে বিসিএস পরীক্ষার্থীরা ক্যাডারগুলো সম্পর্কে যেসব বিষয় জানতে চেয়েছে, সেই কথাগুলোর জবাব দিতেই চেষ্টা করেছি এখানে।

এডমিনঃ ১ম কথা হল, ৯০% সচিব এডমিন থেকে হয়। শুধু পররাষ্ট্র সচিব ছাড়া সকল সচিবই এডমিন থেকে নিয়োগের ইতিহাস আছে। বর্তমানে কয়েকজন মাত্র সচিব অন্য ক্যাডারের। তাই যারা ভবিষ্যতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠতে চান তাঁদের জন্য এডমিনই ভাল চয়েস। প্রথমে একটি ডিসি অফিসে কাজ করতে হবে সহকারী কমিশনার হিসেবে। ২/৩ বছর সময়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা AC(Land) এর দায়িত্ব পাবেন। এরপর ইউএনও,এডিসি, ডিসি। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়েও সহকারী সচিব, উপসচিব... হিসেবে অনেকে কর্মরত থাকেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পোস্টিং হয়। তাই এডভেঞ্চার আছে, এটা এনজয় করতে পারলে ভাল লাগবে। মানুষের সাথে সরাসরি কাজ। তাই সত্যি যদি আপনার ইচ্ছা থাকে, মানুষের জন্য কাজ করবেন - সে সুযোগ এখানে আছে। জুডিশিয়াল সার্ভিস আলাদা হওয়ার পরে এডমিন ক্যাডার নিয়ে অনেক নেগেটিভ কথা শুনা গেছে। বিশেষত আমরা যখন জয়েন করি, তখনই বিষয়টা শুরু হইছিল। তাই অনেকের মাঝে হা-হুতাশ ছিল। এখন কিন্তু সেটা শুনা যায় না তেমন। তখন ভাবা হচ্ছিল মেজিস্ট্রেসি বলতে কিছুই আর এডমিন অফিসারদের থাকবে না। আসলে তো তা নয়। যে কোন দেশেই শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এডমিন অফিসারদের বিকল্প নেই। একজন নন-আর্মড অফিসার অর্ডার করবে, আর আর্মড-পার্সনরা সেটা পালন করবে। এটাই যে কোন সভ্য দেশের নিয়ম। তাই এখন সরকারের প্রয়োজনে সহকারী কমিশনারগণ নিয়মিতই ম্যাজিস্ট্রেসি দায়িত্ব পালন করেন। মোবাইল কোর্টসহ অনেক দায়িত্বই আপনি পাবেন। এরপর পদোন্নতি ভীষণ স্লো - এমন কথা এডমিনের নামে শুনা যায়। কথাটা কিছুটা সত্য। তবে আপনারা যারা এখন জয়েন করবেন, তাঁদের জন্য ভাল খবর হচ্ছে - ২০১৯ সালের দিকে অনেক বড় ব্যাচ রিটায়ার করবে। তখন প্রোমোশন দ্রুত হবে বলে মনে হয়। 

পুলিশঃ পুলিশকে সবার প্রয়োজন। তাই সরকারী চাকরি করে পরিচিতজনের কাছে কেন্দ্রবিন্দু হবার সৌভাগ্য এখন পুলিশেরই সবচেয়ে বেশী। যে যাই বলুক, আপনার মোবাইল নাম্বারটা সবার আকাঙ্ক্ষিত হবেই। আর এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করাও পুলিশ ক্যাডারদের পক্ষে সম্ভব। কাউকে সরাসরি বিপদ থেকে রক্ষা বা আইনি সহায়তা তাঁদের হাতেই। তাই যারা মানুষকে সরাসরি সাহায্য করতে চান, তাঁদের জন্য পুলিশ হওয়াই আমাদের দেশে সবচেয়ে উপযোগী। আর এই সৌভাগ্যের সাথে ঝুঁকির কথাও একটু মাথায় রাখুন। রাজনৈতিক সমস্যা থেকে শুরু করে আইনগত সকল সমস্যা পালনের জন্য ঝুঁকি নেবার সাহসটুকু থাকতে হবে। আর ফিল্ড লেভেলে কাজ করতে নেতা-কর্মীদের ম্যানেজ করে দায়িত্ব পালনের বিষয়টাও আছে। ট্রেনিং শেষে পোস্টিং হলে এএসপিকে সরকারী গাড়ি দেয়া হয় দায়িত্ব পালনের জন্য, যেটা আর মাত্র দু-একটা ক্যাডারে আছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশ অফিসারদের অনেকেই সুযোগ পায়। এতে বেশ ভাল আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায়, সাথে একটু ঝুঁকি তো আছেই। আবার উপরের লেভেলে পোস্ট কম। তাই উপরে পদোন্নতি একটু স্লো, তবে আমাদের দেশে এসপিই অনেক বড় কিছু, আর তাঁর উপরেরগুলোতো আছেই। মাঝে মাঝে আপনার ব্যক্তিগত কোন দোষ না থাকলেও সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের গালি সরাসরি শুনতে হতে পারে। তবে সেটা আপনার আড়ালে, সামনে পড়লে মোবাইল নাম্বারই নিয়ে নেবে। পুলিশের এএসপিদের অধীনে কনস্টেবল থেকে শুরু করে অনেক পুলিশ সদস্য থাকে, তাই দেশের যেখানেই যাবেন, লজিস্টিক সাপোর্ট থাকবে। 

অডিটঃ অডিটে অবশ্য সব সময়ই অল্প ক’টা পোস্ট থাকে। আর যেহেতু পোস্ট অল্প, তাই পদোন্নতি দ্রুত। মোটামুটি বিভাগীয় শহরগুলিতেই পোস্টিং। অডিট হচ্ছে অন্যের ভুল, অনিয়ম এসব ধরা। তাই যে অফিসেই অডিট করবেন, বেশ সম্মানই পাবেন। 

ট্যাক্স ও কাস্টমসঃ ৩৫-তম বিসিএসের সার্কুলারে এই ২টা ক্যাডারে কোন পদ নেই। এটা আপনাদের জন্য দুর্ভাগ্যেরই বিষয়। আগে এত অফিসার নিয়ে নিয়েছে, এখন আর খালি নেই। তাই এখানে এগুলো নিয়ে কিছু বললাম না। 

ইকনমিকঃ সচিবালয়ে বা পরিকল্পনা কমিশনে অফিস। তাই ঢাকায় পোস্টিং। ইকোনোমিক ক্যাডারের অফিসারগণ প্লানিংয়ের কাজ করেন। তাই যারা রিসার্চ রিলেটেক কাজে ইচ্ছুক, তাঁদের জন্য এটা ভাল চয়েস। হয়তো রিসার্চমুখী বলেই ইকনমিক ক্যাডারের অফিসারদের একটা বড় অংশ বিদেশে ডেপুটেশান বা শিক্ষাছুটিতে পড়াশুনা করে। আবার অনেকদিন ধরেই ইকনমিক ক্যাডারকে এডমিনের সাথে যুক্ত করে ফেলবে বলে আলোচনা হচ্ছে। মানে এটা হলে ইকনমিক ক্যাডাররা এডমিন হয়ে যাবে। তবে এটা দীর্ঘদিন ধরেই ঝুলে আছে। তাই এখন এসব জেনে লাভ নেই। কাজ প্রোজেক্টের প্লানিং। তবে উপরের দিকে পদন্নোতির সুযোগ একটু কম। 

তথ্যঃ তথ্য ক্যাডারের অফিসারদের কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজের সুযোগ আসতে পারে। মন্ত্রণালয়ে মাননীয় মন্ত্রীগণের Public Relations officer (PRO), বিদেশে কয়েকটা দূতাবাসে তথ্য কর্মকর্তা, এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ও মহামান্য রাষ্ট্রপতির অফিসেও তথ্য কর্মকর্তা হতে পারেন। তবে এগুলো সাধারণত স্বল্পকালীন হয়। 

পররাষ্ট্রঃ এটাতে আমি চাকরি করি, তাই ঢাক পিটানো হয়ে যাবে কিনা ভাবছি। যাই হোক, ফরেনে চাকরি হলে আপনি সেগুন বাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দিবেন। শুধু বাসা থেকে অফিসে আসা আর ৫টায় অফিস থেকে বের হতে পারলে বাসায় ফেরা এ দুই সময় অফিসের মাইক্রো পাবেন। দুই বছর পূর্ণ হলে আপনি বিদেশে দূতাবাসে পোস্টিংয়ের জন্য উপযুক্ত বলে ধরা হয়। তবে পোস্টিং হতে ৩ বছরের মত লাগে। কেউ কেউ নিজেই দেরী করে বিদেশে পোস্টিং নেয়। এক্ষেত্রে আমার ব্যাচের অভিজ্ঞতা এরকম – অফিসার ১৩ জন। এর মধ্যে ২ জন যোগদানের দুই বছর পরেই পোস্টিংয়ে চলে গেছে। ৪ জন ডেপুটেশানে বিদেশে পড়ছে (১ জন যুক্তরাষ্ট্রে, ৩ জন অস্ট্রেলিয়ায়)। তিন বছরের কাছাকাছি সময়ে আরো ৪ জন পোস্টিংয়ে গেছে। বাকি ৩ জন নিজেরা পোস্টিংয়ে যায়নি, তাঁদের সুযোগ এসেছিল। বিদেশে পোস্টিং হলে ফরেন ভাতা পাবেন। যা পাওয়া যায়, তাতে বিদেশে বিলাসিতা করা যায়না, সংসার চলে। পদোন্নতির সাথে সাথে এলাউন্স বাড়বে। পোস্টিংয়ে থাকা কালে মোটা দাগে বললে বাসা ভাড়া, ২ জন ছেলেমেয়ের পড়াশুনার খরচ, পরিবারের চিকিৎসার ৯০% খরচ সরকার বহন করে। পোস্টিংয়ে থাকা অবস্থায় যে কোন দেশের ডিপ্লোমেটরা ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি কিনতে পারে। তবে গাড়ি দেশে আনতে হলে ট্যাক্স দিতে হবে। অফিসার অল্প, তাই কাজের অনেক চাপ। আবার চাকরিই যেহেতু ফরেনে, তাই অনেক বিদেশে ঘুরতে পারবেন। পোস্টিংয়ের আগেও ট্রেনিং, কনফারেন্স ইত্যাদিতে বিদেশে যাবার সুযোগ আসবে অনেকের। তবে পরিবার ফেলে দীর্ঘদিন বিদেশে থাকা কষ্টকরও বটে। আবার এক দেশে পোস্টিং ৩ বছরের জন্য, এরপর অন্য দেশে ৩ বছর, পরের ৩ বছর ঢাকায়। এটা জেনারেল পোস্টিং প্যাটার্ন। তাই এই ঘন ঘন চেঞ্জ নিজের এবং ছেলেমেয়ের জন্য ঝামেলার। অন্যদিকে ফরেনে অফিসার অল্প বলে পদোন্নতির সুযোগ অন্য চাকরি থেকে ভাল। আমি নিজেই দেখেছি যে, একই বিসিএসের ফরেনের অফিসার জয়েন সেক্রেটারি আর অন্য ক্যাডারের অফিসার সিনিয়র এসিট্যান্ট সেক্রেটারি ছিল। এতদিন এটা প্রচলিত ছিল যে ফরেনে জয়েন করলে সে Ambassador হয়ই। ভবিষ্যতে কি হবে জানি না। তবে এখন পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি অফিসারই সময় হলে Ambassador হয়েছে। রাষ্ট্রদূত দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে, তাই সম্মান মনে হয় একটু পাবেন। বেশ হোমরা-চোমরা লোকজনের সাথে মাঝেই দেখা বা মিটিং সিটিং হবে। তবে দেশে রাস্তাঘাটে আপনাকে কেউ চিনবে না। 

ক’দিন আগে কয়েকজন তরুণ সাহিত্যিক কয়েকটা লেখা দিয়ে সমালোচনা করতে বলল। কিন্তু সমালোচনা করার পরে তাঁরা আমার উপর ক্ষেপে গেল। আমি নাকি সবাইরে প্রশংসা করে গেছি। আমার মন্তব্য থেকে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। কী আর করা - খারাপ বলতে মনে হয় একটু বেশি সাহস লাগে। যাই হোক, সেই বিষয়টা মাথায় রেখে, এখানে আমি একজন বিসিএস পরীক্ষার্থী যেভাবে ভাবে, সেভাবেই বিভিন্ন ক্যাডারের কিছু বিষয় দিতে চেষ্টা করলাম। এগুলো শুধুই তথ্য। অন্যদের কথাও শুনুন। এরপর নিজের বিচার দিয়ে ভাবুন – কোন কাজটা আপনি করতে চান। কোনটায় আনন্দ পাবেন। সেভাবেই চয়েস দিন। জব এনজয় না করতে পারলে ক্যারিয়ারকে ভালবাসতে পারবেন না। তাই আনন্দ খুঁজে পাওয়াই হোক চয়েসের ভিত্তি। এবার দুটা প্রশ্ন, যেগুলো মেসেজে অনেকবার এসেছে - 

সার্কুলারে কোন একটা ক্যাডারে অল্প ক’টা পোস্ট আছে। তো সেটা কি চয়েসে দিব?

আমার ২৮-তম বিসিএস-এর চয়েস নির্ধারণ করতে গিয়ে দেখি অডিটে মাত্র ২/৩ পোস্ট। তো বন্ধু বলল, এটা চয়েসেই দিবে না। কোটা বাদ দিলে ১/২ পোস্ট - সেটা চয়েসে দিয়ে কী হবে? এটা একেবারেই ভুল কথা। পোস্ট বেশি থাক আর কম থাক নিজে যেই চাকরিটা আগে করতে চান সেভাবেই চয়েস দিন। আর পোস্ট পরবর্তীতে বাড়াতে বা কমাতে পারে। সাধারণত কমায় না। কখনও কখনও বাড়ায়। তাই যেসব ক্যাডারের সার্কুলার হয়েছে, সেগুলোতে আপনার পছন্দমত সিরিয়ালে চয়েস দিয়ে দিন। 

মোট কয়টা চয়েস দিব? 

আমার অভিমত হল - যেই চাকরিগুলো হলে আপনি অবশ্যই করবেন, শুধু সেগুলোই চয়েস দিন। এক্ষেত্রে ২টা ইস্যু। (১) যারা বিসিএসে যে কোন ক্যাডার হলেই চাকরি করবেন, তাঁরা সার্কুলার দেখে যেগুলোতে এপ্লাই করতে পারবেন, সবগুলো চয়েস দিয়ে দিন। (২) আর যারা মনে করেন - কয়েকটা ক্যাডার না হলে আসলেই চাকরি করবেন না, তাঁরা প্লিস অন্য ক্যাডার চয়েস দিয়েন না। চাকরি হল আর আপনি জয়েন করলেন না বা কিছুদিন পরে ছেড়ে দিলেন, সেটা সবার জন্য খারাপ। দেশের জন্যও খারাপ। 
তখন আমার ২৮-তম এর ফাইনাল রেজাল্ট ও মেডিকেল হয়ে গেছে। কিন্তু গেজেট তখনও হয়নি। সেই সময় ২৯-তম বিসিএসের ভাইভা শুরু হয়ে গেল। এখন ২৮ আর ২৯ দুটোতেই আমার ফার্স্ট চয়েস ফরেন। আমি ২৯-তমের ভাইভা দিতেই গেলাম না। ভাবলাম - একটা পোস্ট নষ্ট করব কেন। আমার পরিচিত বেশ কয়েকজনকে দেখলাম - ২৮তমে ফার্স্ট চয়েস পেয়েও আবার ২৯-এ ভাইভা দিলেন। বললেন, তখনও গেজেট হয়নি। কী হয় কিছু বলা যায় না। রিস্ক তো আছেই। যাই হোক, তাঁরা বেশি সতর্কতামূলকভাবে এটা করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে এটা দোষের নয়। আইনসিদ্ধও বটে। কিন্তু যেটা হয়েছে, অনেকেই ২বার চাকরি পেয়েছে। আর দ্বিতীয়বার জয়েন করেনি। সে পোস্টগুলো ফাঁকা গেছে। কিছু নাকি কোটা থেকে পুরণ করেছে। এতে সরকারের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অনেক পোস্ট খালিই থেকেছে। আর কিছু যোগ্য লোক চাকরি পায়নি। হয়তো তাঁদের বয়স চলে গেছে। তাই আপনি যে চাকরিটা পেলে আসলেই করবেন, শুধু সেটাই চয়েস দিন। তবে যারা ক্যাডার চেঞ্জ করতে আবার পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য ঠিকই আছে।


সবার জন্য অব্যয় অনিন্দ্য’র শুভকামনা। 

No comments

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();